এক নজরে বিশ্বনবী (সাঃ) এর জীবনী

Comments · 222 Views

সিরাত কেন পড়বো ? মানুষ স্বভাবগতভাবেই বড্ড অনুকরণপ্রিয়। জন্মলগ্ন থেকেই শিশু অনুকরণ করে তার পিতা মাতাকে। একটু ??

চার বছর বয়সে শক্কে সদর: তথা বক্ষ বির্দীর্ণ করার ঘটনা সংঘটিত হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, শক্কে সদরের ঘটনা চারবার সংঘটিত হয়েছে। ১. শৈশবে হযরত হালিমা সাদিয়ার কাছে থাকা অবস্থায়। ২. দশবছর বয়সে (ফাতাহুল বারী ১৩/৪৮১)। ৩. নবুওয়াতপ্রাপ্তির সময় (মুসনাদে আবীদাউদ আততায়ালাসী ২১৫)। ৪. মে’রাজের সময় (বুখারী শরীফ হা ৩৪৯)। আরেক মতে পঞ্চমবার শক্কে সদরের কথাও উল্লেখ আছে, যা সহীহ মতানুসারে সাব্যস্ত নয়। (সীরাতে মুস্তফা ১/৭৫) রাসূল (সাঃ) প্রায় ছয় বছর হযরত হালিমা সাদিয়ার হাতে লালিত হন।

৬ বছর বয়সে মাতার বিয়োগ: রাসূল (সাঃ)- এর মাতা হযরত আমেনার ইন্তেকাল হয়। আবওয়া নামক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। (শরহুল মাওয়াহেব লিয যারকানী ১/১৬০)।

৭ বছর বয়স: থেকে তিনি দাদা আব্দুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে লালিত হন।

 

৬ বছর বয়সে মাতার বিয়োগ: রাসূল (সাঃ)- এর মাতা হযরত আমেনার ইন্তেকাল হয়। আবওয়া নামক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। (শরহুল মাওয়াহেব লিয যারকানী ১/১৬০)।

৭ বছর বয়স: থেকে তিনি দাদা আব্দুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে লালিত হন।

 

৮ বছর বয়সে: দাদা ইন্তেকাল হয়। এর পর থেকে চাচা আবু তালেবের হাতে লালিত হন। (তবকাতে ইবনে সাআদ ১/৭৪)।

১২ বছর বয়সে সিরিয়া গমন: চাচার সাথে সিরিয়ার ব্যবসায়িক সফরের সঙ্গী হন। এই সফরে বুহাইরা রাহের তাঁর নবুওয়াতের ভবিষ্যদ্বাণী করেন। (আল খাসায়েসুল কুবরা ১/৮৪)। মতান্তরে ১৪/১৫/২০ বছর বয়সেঃ আরবে ফুজার যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। আপন কোন কোন চাচার পীড়াপীড়িতে রাসূল (সাঃ) অংশ নেন। কিন্তু কেতালে অংশগ্রহণ করেননি। (রাওজুল আনফ ১/১২০)।

১৬ বছর বয়সে সামাজিক সংগঠন: মক্কাবাসীর (পাঁচ বংশীয় চুক্তি) হিলফুল ফুজুল নামের চুক্তিতে অংশগ্রহন করেন।

২৫ বছর বয়সে বিবাহ বন্ধন: রাসূল (সাঃ) হযরত খাদিজা (রাঃ) - এর ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে সিরিয়ার দ্বিতীয় সফর করেন। এই সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পর তাঁর সততা ও নিষ্ঠা এবং ব্যবসায়িক মুনাফা অবলোকন করে হযরত খাদিজা (রাঃ) রাসূল (সাঃ) - এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করেন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। (তবকাতে ইবনে সাআদ ১/৮৩)। তৃতীয়বার সংস্কারের সময় হাজরে আসওয়াদকে নিজ হাতে স্থাপন করেন এবং এর মাধ্যমে পরস্পর যুদ্ধান্দেহী আরব গোত্রগুলোর মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। (সীরাতে ইবনে হেশাম ১/২৫)। ৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত নিজের এমন নজির বিহীন সততা, নিষ্ঠা, কর্মতৎপরতা ও কীর্তি স্থাপন করেন, যার কারণে আপন-পর-সকলের মুখে তাঁর সততা ও নিষ্ঠার কথা উচ্চারিত হতে থাকে।

৪০ বছর বয়সে নবুয়ওত লাভ: তিনি বেশির ভাগ সময় হেরাগুহাতেই ব্যয় করেছেন। এখানেই তাঁকে নবুওয়াতের তাজ পরানো হয়।

 

নবুওয়াতের চতুর্থ বছর প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার: আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর প্রতি প্রকাশ্য দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ আসে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রকাশ্য দাওয়াত দিতে আরম্ভ করলে আরব গোত্র বিশেষ করে কুরাইশরা প্রকাশ্য দুশমনী ও বৈরিতায় মেতে ওঠে।

নবুওয়াতের পঞ্চম বছর সাহাবাদের হাবশা হিজরত: হযরত জাফর ইবনে আবী তালেব (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন। এই বছরই হাবশার প্রতি প্রথম ও দ্বিতীয় হিজরত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম হিজরতে ১১ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী অংশগ্রহন করেন। (ফতহুল বারী ১/১৮০) দ্বিতীয় হিজরতে ৮৬ জন পুরুষ এবং ১৬ জন নারী অংশগ্রহন করেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম ১/১১১) এই বছরই আবু জেহেলের হাতে হযরত সুমায়্যা (রাঃ) শহীদ হন। ইসলামের জন্য নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম শহীদ।

নবুওয়াতের ষষ্ঠ বছর উমরের ইসলাম গ্রহণ: হযরত হামজা (রাঃ) এবং হযরত উমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন। তাঁদেরকে নিয়ে মসজিদে হারামে প্রকাশ্যে নামায আদায় করা হয়। (শরহুল মাওয়াহেব ১/২৭৬)

নবুওয়াতের সপ্তম বছর বয়কট (অবরুদ্ধ জীবন): মুকাত’আয়ে কুরাইশের তথা স্যোসাল বয়কটের ঘটনা ঘটে। রাসূল (সাঃ)- এর সাথে বনু হাশেম এবংব নু মুত্তালিবকে শু’আবে আবী তালেবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এ অবস্থাতেই রাসূল (সাঃ)-এর চাচাত ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)- এর জন্ম হয়। (রওজুল আনফ ১/২৩২)
নবুওয়াতের অষ্টম বছর চন্দ্র দ্বিখন্ডীত করন: মুশরিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শক্কে কমর তথা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার অকল্পনীয় মুজিযা প্রকাশ পায়। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/১১৮)

নবুওয়াতের দশম বছর বয়কট হতে মুক্তি: মুকাতাআ সমাপ্ত হয়। (তবকাতে ইবনে সাআদ ১/১৩৯) এ বছরই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর চাচা আবু তালেব ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের প্রায় ৩ থেকে ৫ দিন পর হযরত খাদিজা (রাঃ)- এর ইন্তেকাল হয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই বছরকে আম্মুল হুজন তথা পেরেশানির বছর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। (শরহুল মাওয়াহেব ১/২৯১) এ বছরই হযরত সাওদা বিনতে যুমআর সাথে রাসূল (সাঃ)- এর শাদি মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। এই বছর হযরত আয়েশা (রাঃ) ও তাঁর আকদে নেকাহ আসেন। কিন্তু রুখসতী হয়নি। এই বছর তায়েফের হৃদয়বিদারক ঘটনাও ঘটে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।

নবুওয়াতের একাদশ বছর মদিনায় ইসলাম: মদীনা থেকে আগত হাজীদের মধ্যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর দাওয়াতে প্রায় ৬ জন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহন করেন। এর মাধ্যমে আনসারদের ইসলাম দীক্ষিত হওয়ার ধারা আরম্ভ হয়। ( আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/১৪৮)

নবুওয়াতের দ্বাদশ বছর মেরাজ: রাসূল (সাঃ)- এর ঐতিহাসিক মে’রাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উম্মতের ওপর ৫ ওয়াক্ত নামায ফরজ হয়। এ বছরই বাইআতে উকবায়ে উলা সংঘঠিত হয়। এতে ১২ জন ইসলাম গ্রহন করেন। (শরহুল মুওয়াহেব ১/৩১৬)।

নবুওয়াতের ত্রয়োদশ বছর মদিনায় হিজরত: বাইআতে উকবায়ে ছানিয়া অনুষ্ঠিত হয়। যাতে ৭৩ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী ইসলাম গ্রহন করেন। এ বছরই মুসলমানরা মদীনা হিজরতের অনুমতি পান। এ বছরই কুরাইশরা (নাউজু বিল্লাহ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে হত্যার সিন্ধান্ত নেয়। হযরত জিবরাঈল (আঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে কুরাইশদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত করে বলেন, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে এখান থেকে হিজরতের অনুমতি প্রদান করেছেন। অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত আবু বকর (রাঃ)- কে সঙ্গে নিয়ে মদীনায় হিজরত করেন।

রাসূল (সাঃ)- এর মাদানী জিন্দেগী: হিজরতের পরের সময়কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর মাদানী যিন্দেগী বলা হয়। যা ছিল অত্যন্ত গৌরবদীপ্ত সময়। এ সময়গুলোতে রাসূল (সাঃ)- এর অক্লান্ত মেহনত, চেষ্টা কুশেশ এবং আতেœাৎসর্গের মাধ্যমে ইসলামের বিজয়কেতন হস্তগত হয়।

হিজরী প্রথম বর্ষ: রাসূল (সাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)- এর সাথে তিন দিন সওর গুহায় আতœগোপন করার পর ১ রবিউল আউয়াল মদীনার দিকে হিজরত করেন। ইসলামের প্রথম মসজিদ মসজিদে কুবা প্রতিষ্ঠা করেন। মদীনার ইহুদি এবং প্রতিবেশী গোত্রগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা ও সম্প্রীতির চুক্তিনামা লেখানো হয়। এ বছর হযরত সালমান ফারেসী (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন। মসজিদে নববীও প্রতিষ্ঠা করেন এই বছর। আযান ও ইকামতও এ বছর আরম্ভ হয়। আনসার এবং মুহাজেরদের মধ্যে এমন ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হয়, যার উপমা দুনিয়ায় বিরল। এই বছর শাওয়াল মাসে হযরত আয়েশা (রাঃ)- এর রুখসতী হয়। (চলবে)

Comments